রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪ অপরাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ দ্বিতীয় ধাপে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরেও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না ঝালকাঠির জনসাধারণ। শহরে কিংবা গ্রামে সবখানেই মাস্ক ছাড়াই ঘর থেকে বের হচ্ছে মানুষ। বাজারেও গাদাগাদি করে চলছে বেচা কেনা। ছোট যানহাবনে একাধিক যাত্রী একসঙ্গে বসে যাতায়াত করছেন। এতে সংক্রমণ আরো বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সরকারি নির্দেশনাগুলো প্রচার করে যাচ্ছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জনসাধারণের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। এর পরেও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এদিকে করোনা প্রতিরোধের টিকা নিতে আগ্রহ নেই অনেকের। ভয় ও আতঙ্কের কারনেও টিকা নেওয়ার হার কম। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার চারটি উপজেলায় ৭ লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে এক লাখ ২০ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের। গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে বুধবার ৩১ মার্চ পর্যন্ত জেলায় ১৮ হাজার ২৩৫ জন টিকা নিয়েছেন। এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৭০০ মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে এক বছরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮৮০ জন। মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের, আর সুস্থ হয়েছেন ৮২৮ জন। তবে করোনা উপসর্গে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের কোন তালিকা নেই স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে।
বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার জরিপে জানা যায়, ঝালকাঠিতে করোনা উপসর্গে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যাও অনেক। অনেকে আবার আক্রান্ত হয়েও পরীক্ষা না করেই বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েছেন।
শহরের ফায়ার সার্ভিস মোড়, চৌমাথা, চাঁদকাঠি চৌমাথা, কলেজ মোড়, বিভিন্ন খেয়াঘাট, লঞ্চঘাট, বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাসা থেকে কাজে বের হওয়া অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। একসঙ্গে জটলাকরে হেঁটে হেঁটে গল্প করছেন কেউ কেউ। গণপরিবহনে যাত্রীসংখ্যা কম নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। ছোট যানবাহনে একাধিক যাত্রী একসঙ্গে বসে যাতায়াত করছেন। সকাল থেকেই বাজারে মাস্ক বিহীন মানুষের ভীড় রয়েছে। এসময় কথা হয় বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে। করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে এখনো অনেকের ধারণা নেই। যারা সচেতন দাবি করেন, তাদের মুখেও মাস্ক দেখা যায়নি।
এখনো টিকা নেয়নি এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকেই ভয়ের কারনে টিকা নিচ্ছেন না। অজানা অতঙ্ক রয়েছে কারো মধ্যে। কেউ বলছেন, টিকা নেওয়ার পরেও অনেকে আক্রান্ত হয়েছে, তাই টিকা নিতে আগ্রহ কমে যাচ্ছে।
ঝালকাঠি সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন হিমু বলেন, সব শ্রেণির মানুষ এখনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। যারা সচেতন দাবি করেন, তাদের মুখেও মাস্ক দেখা যায় না। টিকা নিতেও মানুষের আগ্রহ কম। এ ব্যাপারে প্রশাসনের আরো কঠিন হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে রাজনীতিবিদ ও জনপ্রনিধিদের আরো সচেত হতে হবে, যাতে নেতাদের দেখে কর্মীরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সরকারি নির্দেশনা প্রচার করা হচ্ছে। আমরা শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনসাধারণকে পরামর্শ দিচ্ছি। ইতোমধ্যেই জেলার বিভিন্ন স্থানের মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রয়োজনে আরো কঠোর অবস্থানে যাবে জেলা প্রশাসন।
ঝালাকঠি সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী বলেন, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি নেমে চলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। করোনা প্রতিরোধের টিকা নিতে মানুষের মাঝে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
Leave a Reply